তিন ইসরাইলি নারী ও ৯০ ফিলিস্তিনি মুক্ত
২১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৩ এএম
গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর তিন ইসরাইলি নারী বন্দি মুক্তি পান। মুক্ত ৯০ জন ফিলিস্তিনি বন্দিও। ইসরাইলের সেনা জানিয়েছে, তিন নারী বন্দিকে তেল আভিভের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তারা পরিবারের সঙ্গে মিলিত হন।
ইসরাইলের সেনার তরফে জানানো হয়েছে, তিন নারী বন্দিকে মুক্তি দিয়ে ইসরাইলের ভূখ-ে নিয়ে আসার পর ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী ও ইসরাইলের সুরক্ষা সংস্থার প্রতিনিধিরা তাদের সঙ্গে করে নিয়ে আসেন। প্রথমেই তাদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। রোববার মুক্তি পাওয়ার পর তেল আভিভের হাসপাতালে মায়ের সঙ্গে সময় কাটালেন ২৮ বছর বয়সি এমিলি ডামারি। তার মা ম্যান্ডি ডামারি জানালেন, ‘৪৭১ দিন পরে অবশেষে এমিলি ঘরে ফিরেছে। আরো অনেক পরিবার এখনো তাদের প্রিয়জনদের ঘরে ফেরার অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছেন।’ বন্দি ও নিখোঁজ পরিবারের ফোরামের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘এই যে তিনজন ঘরে ফিরলেন, এটা অন্ধকারে আলোর রেখার মতো ঘটনা। এই ঘটনা আশা জাগাচ্ছে।’ তেল আভিভে বড় স্ক্রিনে হাজার হাজার ইসরাইলি এই ঘরে ফেরার দৃশ্য লাইভ দেখেন। অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। অনেকে আনন্দে চিৎকার করেন।
হামাস তিনজন ইসরাইলি নারী বন্দিকে মুক্তি দেয়ার পর ইসরাইল ৯০ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেয়। যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ইসরাইল-সহ অনেক দেশ হামাসকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বলে ঘোষণা করেছে। যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর গাজার মানুষও সানন্দে তাকে স্বাগত জানিয়েছেন। ডিডাব্লিউকে তারা জানিয়েছেন, তাদের আশা, এই যুদ্ধবিরতি দীর্ঘস্থায়ী হবে। রাফা থেকে ৪৩ বছর বয়সি আল নাসের বলেছেন, যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ায় তিনি আনন্দিত। কারণ, এর ফলে রক্তপাত থামবে। বাচ্চাদের জীবন বাঁচবে। তিনি জানিয়েছেন, ‘রাফায় ফিরে আমি বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। যে জায়গায় আমি থাকতাম, সেই জায়গাটা দেখে মনে হয়েছে, যেন ভয়ংকর ভূমিকম্প সব গুঁড়িয়ে দিয়েছে। শিউরে ওঠার মতো দৃশ্য।’
নাসের জানিয়েছেন, ‘সব ফিলিস্তিনি আশা করে, শান্তি ও নিরাপত্তা আসবে। আমরা অর্থ চাই না। আমরা গাজায় শান্তিতে থাকতে চাই।’ ২১ বছর বয়সি মালাক হুসেন মধ্য গাজায় একটি ত্রাণশিবিরে থাকেন। তিনি বলেছেন, ‘আমার একটাই কামনা, গাজা যেন আগের মতো হয়ে যায়। আমরা আবার সবকিছু গড়ে তুলতে পারব।’ তিনি জানিয়েছেন, ‘আর যেন যুদ্ধের মধ্যে পড়তে না হয়। শান্তি যেন বজায় থাকে। আমার একটাই প্রার্থনা যুদ্ধ যেন আর কখনো ফিরে না আসে।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে তার কাজের শেষদিনে কার্যকর হওয়া এই যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়েছেন জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, ‘প্রচুর রক্তপাত, মৃত্যুর পর গাজা যুদ্ধের আওয়াজ বন্ধ হলো।’ এই যুদ্ধবিরতি প্রসঙ্গে বাইডেন বলেছেন, ‘অন্যতম কঠিন আলোচনার মধ্যে দিয়ে এই যুদ্ধবিরতি হয়েছে। মতৈক্যে পৌঁছানোর রাস্তা সহজ ছিল না। কিন্তু ইসরাইল হামাসের উপর ভয়ংকর চাপ সৃষ্টি করেছিল। জাতিসংঘও চুক্তিকে সমর্থন করেছিল।’
গাজায় ঢুকেছে মানবিক সাহায্যের ৬৩০টিরও বেশি ট্রাক : ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নের পর ৬৩০টিরও বেশি ট্রাক-বোঝাই মানবিক ত্রাণ গাজা অঞ্চলে প্রবেশ করেছে। জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা কর্মকর্তারা এ কথা জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্ল্যাটফর্ম এক্স-পোস্টে জাতিসংঘের মানবিক-বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল টম ফ্লেচার বলেন, ৬৩০টিরও বেশি ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে অন্তত ৩০০টি ট্রাক উত্তরাঞ্চলে মানবিক সহায়তা নিয়ে এসেছে। নষ্ট করার মতো আর সময় নেই। এদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, অবরুদ্ধ গাজায় ইসরাইলি হত্যাযজ্ঞের পর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার একটি ‘জটিল ও চ্যালেঞ্জিং কাজ’ হবে।
ইসরাইল ছাড়া অন্য কোন দেশের জাহাজে হামলা করবে না হুথিরা : গাজা যুদ্ধবিরতি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হলে ইয়েমেনের হুথিরা ইসরাইল-সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতেই তাদের আক্রমণ সীমাবদ্ধ রাখবে, হিউম্যানিটেরিয়ান অপারেশনস কোঅর্ডিনেশন সেন্টার (হুক) জানিয়েছে। হুথি বাহিনী এবং বাণিজ্যিক শিপিং অপারেটরদের মধ্যে যোগাযোগকারী এবং হুথি সামরিক বাহিনীর সাথে যুক্ত সানা-ভিত্তিক হুক জানিয়েছে যে, তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ব্রিটিশ ব্যক্তি বা সংস্থার মালিকানাধীন জাহাজ, সেইসাথে তাদের পতাকাতলে চলাচলকারী জাহাজগুলোর বিরুদ্ধেও ‘নিষেধাজ্ঞা’ প্রত্যাহার করছে।
‘আমরা নিশ্চিত করছি যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য বা দখলদার ইসরাইলি সত্তা কর্তৃক ইয়েমেন প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে কোনও আগ্রাসনের ক্ষেত্রে, আগ্রাসী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করা হবে,’ ১৯ জানুয়ারী শিপিং শিল্পের কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো একটি ইমেলে বলা হয়েছে, ‘এ ধরনের ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা হলে তাৎক্ষণিকভাবে আপনাদের অবহিত করা হবে।’ হুক জানিয়েছে যে, হুথিরা ‘চুক্তির সমস্ত পর্যায়ের সম্পূর্ণ বাস্তবায়নের পরে’ ইসরাইল-সংযুক্ত জাহাজগুলিকে লক্ষ্যবস্তু করা বন্ধ করবে। বিশ্বের অনেক বৃহৎ জাহাজ কোম্পানি লোহিত সাগরের মধ্য দিয়ে তাদের চলাচল স্থগিত করেছে এবং আক্রমণ এড়াতে তাদের জাহাজগুলিকে দক্ষিণ আফ্রিকার দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে। ইরান-সমর্থিত হুথিরা ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে বিভিন্ন জাহাজে ১০০ টিরও বেশি আক্রমণ চালিয়েছে এবং দুটি জাহাজ ডুবিয়ে দিয়েছে, আরেকটি আটক করেছে এবং কমপক্ষে চারজন নাবিককে হত্যা করেছে। তারা দক্ষিণ লোহিত সাগর এবং এডেন উপসাগরকে লক্ষ্যবস্তু করেছে, যেগুলি আফ্রিকার হর্ন এবং মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে একটি সংকীর্ণ বাব আল-মান্দাব প্রণালী দ্বারা সংযুক্ত। সূত্র : বিবিসি, আল-জাজিরা, রয়টার্স।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন ট্রাম্প
ভোটের অধিকার রক্ষায় জনপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে : সিইসি
অস্ত্র মামলায় মামুন খালাস
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে আলোচনা সভা
ইনু-মেনন-সালমান-আনিসদের রিমান্ড, নতুন করে গ্রেপ্তার মন্ত্রী-এমপিসহ ১৬ জন
দলীয় নেতাদের একযোগে কাজ করার আহ্বান এবি পার্টির
হত্যা মামলায় মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ৫ দিনের রিমান্ডে
হজ ও ওমরাহ যাত্রীদের জন্য বিশেষ নির্দেশনা
আমদানি মূল্য পরিশোধের সময় বাড়াল কেন্দ্রীয় ব্যাংক
বকেয়া পরিশোধে জুন পর্যন্ত সময় বাড়লো আদানি
অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রত্যাহার ব্রিটিশ এমপিদের
দিল্লি ফ্যাসিবাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পরিণত হয়েছে : রিজভী
বেক্সিমকোর ১৬টি কারখানার ছাটাইকৃত শ্রমিকদের চাকরি ফিরে পাওয়ার সিদ্ধান্ত ২৭ জানুয়ারি
যুদ্ধবিরতির কয়েক মিনিট আগেও ইসরায়েলের হামলা গাজায় বিলম্বিত সময়ের মধ্যে নিহত ১৯
আমেরিকার স্বর্ণযুগ শুরু হচ্ছে
প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন, সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম
সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের মাঝে ছাত্রদল নেতার শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ
এবার মেডিকেলে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় উত্তীর্ণদের ফল স্থগিত
চীনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এলডিপি মহাসচিবের বৈঠক
সরিষাবাড়ী ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে কম্বল বিতরণ